ক্যাপসিকাম ও মরিচ

মরিচের পাতার সারকোস্পোরা দাগ রোগ

Cercospora capsici

ছত্রাক

5 mins to read

সংক্ষেপে

  • পাতায় সাদা কেন্দ্রবিশিষ্ট বড় এককেন্দ্রীয় দাগকে ঘিরে অসংখ্য বাদামী বলয়াকৃতি হলুদাভ বলয়যুক্ত (ব্যাঙের চোখের ন্যায়) দাগ দেখা যায়।
  • বাদামী দাগগুলি ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে বড় দাগে পরিণত হয়ে পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
  • পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে এবং ফল ঝলসে যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


ক্যাপসিকাম ও মরিচ

উপসর্গ

সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে পাতায় রক্তাভ-বাদামী প্রান্ত যুক্ত এবং হাল্কা ধূসর কেন্দ্রবিশিষ্ট গোলাকার বাদামী দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে, এগুলো ১.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃহৎ দাগ তৈরী করে যা সাদা কেন্দ্রের চারপাশে গাঢ় এককেন্দ্রীয় বলয় দ্বারা আবৃত থাকে। একটি ঘন অস্পষ্ট হলুদ বলয় সমেত এই দাগ ব্যাঙের-চোখের মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আকার ধারন করে। পাতার ফলকে এরকম অসংখ্য দাগ তৈরী করার মাধ্যমে একত্রিত হয়ে বৃহৎ ক্ষত তৈরী করে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। সাদা কেন্দ্রভাগ শীঘ্রই শুকিয়ে যায় এবং পাতায় 'শট-হোল' প্রভাব সৃষ্টি হয়ে পাতা ঝরে পড়ে যায়। সংক্রমণের শেষ ভাগে পাতা হলুদ হয়ে নেতিয়ে পড়ে বা ঝরে যায় এবং ফল ঝলসে যায়। সংক্রমণ তীব্র হলে ফলের বোঁটা এবং বৃতি আক্রান্ত হয়ে কাণ্ড-পচা রোগ সৃষ্টি করে।

Recommendations

জৈব নিয়ন্ত্রণ

গরম জলে ৩০ মিনিট ধরে ৫২° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বীজ শোধন করলে বীজে ছত্রাকের উপস্থিতি সীমিত হয়। মনে রাখবেন, যদি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা না হয় ( অতিরিক্ত সময় বা তাপমাত্রা) তাহলে এই শোধন প্রক্রিয়া বীজের অংকুরোদ্গম হারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। পাতায় দাগ দেখা মাত্র দমন ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সর্বশেষ ফসল সংগ্রহের পূর্বে ১০ থেকে ১৪ দিন পর পর ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে কপার হাইড্রোক্সাইড সমৃদ্ধ দ্রব্য পাতাতে স্প্রে করতে হবে। পাতার উভয় পাশে স্প্রে করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। প্রতি কেজিতে ৩ গ্রাম ক্যাপটান দ্বারা বীজ শোধন করা হলে তা ভালভাবে রোগ দমন করে। মরিচের পাতার সারকোস্পোরা দাগ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য দমন ব্যবস্থার সাথে পাতায় কপার হাইড্রোক্সাইড, ক্লোরোথ্যালোনিল অথবা ম্যানকোজেব স্প্রে করা যেতে পারে। পাতায় দাগ দেখা মাত্র দমন ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সর্বশেষ ফসল সংগ্রহের পূর্বে ১০ থেকে ১৪ দিন পর পর ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রয়োগ করতে হবে। পাতার উভয় পাশে স্প্রে করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

এটা কি কারণে হয়েছে

সারকোস্পোরা ক্যাপসি্সি নামক ছত্রাক উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে বীজতলা ও মাঠে মরিচ গাছে আক্রমণ করে। বীজগুটি সংক্রমিত উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশে, মাটিতে ও বীজের অভ্যন্তরে এক মরশুম থেকে অন্য মরশুম পর্যন্ত বেঁচে থাকে। চাষাবাদের সময় শ্রমিকের মাধ্যমে, বৃষ্টি, সেচের জল, বাতাস, চাষের যন্ত্র এবং এক পাতার সঙ্গে অন্য পাতার সংস্পর্শে সংক্রমণ ঘটে। সরাসরি পাতায় অনুপ্রবেশের মাধ্যমে এবং দীর্ঘক্ষণ পাতা ভেজা অবস্থা থাকলে তা পাতায় সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হচ্ছে ২৩° সেলসিয়াস উষ্ণ তাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমান ৭৭ থেকে ৮৫%। পরিস্থিতি যদি এমনটা থাকে তাহলে ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাসপ্রাপ্ত হয় বিশেষ করে যদি আক্রমণ মরশুমের প্রথম দিকে হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সুস্থ ও অনুমোদিত বীজ সংগ্রহ নিশ্চিত করুন।
  • উত্তম বায়ু চলাচলের জন্যে এবং পাতা অতিরিক্ত সময় ধরে ভেজা থাকা এড়াতে প্রত্যেক গাছের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রেখে চারা রোপণ করুন।
  • মালচ্‌ বা আস্তরন ব্যবহার করে ছত্রাক এবং গাছের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করুন।
  • গাছকে সোজা করে ধরে রাখার জন্য খুঁটি ব্যবহার করুন।
  • পাতায় জলের স্পর্শ কমানোর জন্য ড্রিপ পদ্ধতিতে জলসেচ দিন।
  • বীজতলা, চারাগাছ কিংবা অন্যত্র রোপন করা গাছগুলো লক্ষণ প্রকাশ করে কিনা তা নিরীক্ষা করে দেখুন এবং আক্রান্ত গাছ মাঠ থেকে সরিয়ে ধ্বংস করে ফেলুন।
  • মাঠ ও মাঠের চারপাশ থেকে অসহনশীল আগাছা সরিয়ে ফেলুন।
  • গাছ সিক্ত থাকলে মাঠে কাজ করবেন না।
  • অন্ততঃ ৩ বছরেরও বেশী সময়ের জন্য শস্য-চক্র চলমান রাখুন।
  • ফসল উত্তোলনের পর উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ অপসারন করে ধ্বংস করে দিন।
  • কাণ্ড-পচা রোগাক্রান্ত ফল থেকে যে বীজ সংগ্রহ করা হয়নি এ ব্যাপারটা নিশ্চিত করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন